Breaking

Saturday, January 19

স্টেশনের মেয়ে

স্টেশনের মেয়ে

কোন এক বিকালে এক ওটও স্টেশনের পাশে হাঁটছিলাম মনির, মেহেদী ও আল-আমিন। আমরা তিন বন্ধু,  দ্বিতীয় বর্ষের দ্বাদশ এর শিক্ষার্থী। প্রচণ্ড ঘোরাঘুরির নেশা। অনেক কিছু জানা যায়, শেখা যায়, নানান বর্ণের নানান পেশার মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায় বলেই ঘুরতে ভাল লাগে তাদের।আমাদের বন্ধু দের মধো  মনির সবচেয়ে ভিন্ন।তার খুটিনাটি খুজেবের করার সক। হঠাৎ মনিরের চোখে ধরা পড়ল ১৬ বছর বয়সী এক তরুণী। কালো কেশ বাতাসে উড়িয়ে তাদের দিকেই আসছে। প্রায় কাছাকাছি এসে মেয়েটা একটা বাদামওয়ালা পিচ্চিকে ডাক দিল। মনির, মেহেদী ও আল-আমিন বলাবলি করছিল মেয়েটা বোধহয় খারাপ। একটু পর মেহেদী  বাদামওয়ালাকে ডাকল। বাদাম নেয়ার ফাঁকে মেয়েটির সম্পর্কে একটু জিজ্ঞেস করল। পিচ্চি বলল, আফায় খুব ভালো। আমারে দেখলেই বাদাম নেয়। তয় হুনছি খারাপ কাজ কইরা টাকা কামায়! মানষেরা মোটর সাইকেল, গাড়ি দিয়া আইসা লইয়া যায় আবার রাইখাও যায়। ছেলেটি কথা বলেই যাচ্ছিল। মায়ে কইছে মানুষরে ওজনে কম বাদাম দিলে পাপ অয়। এজন্যিই ওজনে কম দেই না। তাইলে খারাপ কাজ করলে পাপ অয় না? পিচ্চিকে টাকা দিতে দিতে মেয়েটিকে ইশারা করল আল-আমিন। মেয়েটি কাছেআসল। এরা লোক দেখলেই বোঝে কে কোন উদ্দেশে কাছে ডাকছে। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ হল। মেয়েটিও আজ কথা বলছে আমাদের সাথে। মেয়েটা  বলল আমার এক একটা কথা বুকের জমাট ব্যথা থাকে সেখান থেকে বোধহয় বের হচ্ছিল। বাল্যকালের সুখস্মৃতি হাতড়াচ্ছে মেয়েটি। আনন্দময় জীবন ছিল তার। কিছুটা পড়াশোনাও করেছিল। মাত্র ১০বছর বয়সে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় বাবা মারা যায়। সেদিন সেও ছিল সাথে। ইশ যদি আমিও  মরতাম তাহলে ভালই হত। পাপ কম, হিসেব কম, সোজা স্বর্গে চলে যেতাম। মা কি করে আপনার? হঠাৎ প্রশ্ন করল মেহেদী । অন্যের বাসায় কাজ করে। হকচকিয়ে উত্তর দিল মেয়েটি। ১৩ বছর বয়সে মাত্র ২৫ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেয় আমার। মায়ের অনেক কষ্টে জমানো টাকা ছিল। বিয়ের প্রথম মাস ভালই কাটছিল। স্বামীর আদর-ভালবাসায় দুনিয়াকেই স্বর্গ মনে করছিলাম। মাসের শেষে আস্তে আস্তে ভালবাসায় ভাঁটা পড়তে থাকে। একটা চাকুরি করত। বিয়ের পরপরই ছেড়ে দিয়েছে। এখন নতুন চাকুরি খুঁজছে। মায়ের কাছ থেকে টাকা আনার জন্য জোর করত। অলস, কাজকর্ম করতে চায় না। আমি আনতে চাইনি। এক সময় বলত যেভাবে পারিস টাকা উপার্জন করবি। ভাবছিলাম হাতে টাকা নাই তাই রাগের মাথায় এমন কথা বলছে। পরে বুঝছিলাম এটাই তার মনের কথা ছিল। একদিন সন্ধ্যাবেলা আমার স্বামীই আমাকে এই ট্রেন স্টেশনে রেখে যায়! চোখযুগল ছলছল করছে মেয়েটির। স্বামীর আদেশ মানছি। পাপতো করছি না! স্বামীর কথা অমান্য করলে স্বর্গে যাব কিভাবে? এখন বাসায় গেলে দেখব সে আরামে ঘুমাচ্ছে। বড়ই সুখের সে ঘুম। রাগ নাকি অভিমান তেমনকিছু বোঝা গেল না কথাগুলোয়।
একটা দীর্ঘশ্বাস! নিরবতা-নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে আল-আমিন বলল, একটা শক্ত বড় ইট সংগ্রহ করতে পারবেন না? বলেই যাচ্ছে আল-আমিন। এইটা আপনার অলস-অকর্মণ্য স্বামীর বিছানার পাশে রাখবেন। যেন সে বুঝতে না পারে। যখন সে গভীর ঘুমে থাকবে তখন ইটটা সোজা কপাল বরাবর মারবেন। এক আঘাতে মারলে ওর কষ্ট কম হবে, আপনার পাপও কম হবে। আতক হয়ে উঠল মেয়েটি। এ কী বলছেন! ও আমার স্বামী। এই বলে মেয়েটি চলে যেতে চাইল। কথাটি হয়তো তার ভাল লাগেনি। মনির, মেহেদী, আল-আমিন কেউই থামাল না। কোনো একদিকে হাঁটা দিল মেয়েটি। অন্ধকারের দিকে, না হয় আলোর দিকে….!

1 comment: