Breaking

Monday, January 28

আজও তোমার আপেক্ষাই বন্ধু

আজও তোমার আপেক্ষাই বন্ধু 


সকাল সকাল আম্মার ডাকে ঘুম ভাঙল আমার। বাবা নাকি মস্ত বড় একটা মাগুর মাছ কিনেনিয়ে আসছে বাড়িতে। এটা এখন দেখতে যেতে হবে।
আম্মা আমাকে ড়াগছে মনির আয় দেখে যা, তোর বাবা কত বড় মাছ এনছে।তখন আমি বলাম যাও আমি বলাম আমি দুই মিনিটের মধোই আসতেছি।  আমি বিছানা থেকে উঠতে যাব, এই মুহূর্তে নিশার ফোন।নিশা বলো বিকেলে পড়.... পাশে দেখা করো।তখন আমি বলাম কেন একটুকি জানতে পাড়ি। —নিশা উওরে বলো _বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমি বলাম সত্যি? তখন কিছু খন চুপ করে থেকে বলো হুম্ খুশি হয়েছ তুমি?মানে কি?
তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, আর আমি খুশি হব?
 নিশা বলো কিছুই করার নাই মনির আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না, ফোন রেখে দিল নিশা। আম্মা আবার ডাকতে এলো আমাকে, পেছন পেছন বাবাও। কিরে,চল,মাছটা দেখবি চল। বাবার জোরাজুরিতে মাছ দেখতে যেতেই হলো আমাকে। কিন্তু আমার কিছুই ভালো লাগছে না।আর আমার নিজের কাছে যেন খারাপ লাগছিল। আমি নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।নিশা আমাকে ২৯৯টা চিঠি লিখেছে। সব কয়টা নিয়ে বসেছি। রুমে আগুন জ্বালিয়ে আর একটা বেনসন সিগারেট জ্বালিয়ে মনের দুখে একটার পর একটা চিঠি পুড়ছি আমি। একটায় নিশার হাসিমাখা ছবি দেখে আর পুড়তে পারলাম না। আম্মা আমার ঘরে এসে এসব পোড়ানো কাগজ দেখে একপ্রকার কান্না শুরু করে দিলেন। আমার হাতে নিশার পোড়া ছবি, স্নিগ্ধ ঠোঁটের আভা এখনো ঝলমল করছে। আম্মা বিষয়টি বুঝে কিছুটা সান্ত্বনার কথাবার্তা বললেন। কিন্তু মনে মনে নিশার ওপর আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। আমি রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। রাগটা তখনই ঝাড়তে হয়। নিশা কে ফোন দিলাম সব রাগ উগরে দেব আজ। নিশা ফোন রিসিব করে হ্যাঁ...বলো মনির। আমি বলাম কী করো?নিশা বলো_ও ফোন দিছিল।  এই মাএ কথা বললাম। আমি বলাম ও-টা কে?
নিশা আমাকে বলো যার সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি বললাম ওই ব্যাটা তোমাকে ফোন দেবে কেন?নিশা বলো এটা কেমন কথা, মনির ? ও তো ফোন দিতেই পারে। আমি রেগে গিয়ে বললাম না বলবা বিয়ের পরে যেন ফোন দেয়।নিশা পারব না। ফোন রাখো।মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম, বিকেলে গিয়ে আংটিটা নিয়ে আসব, কোনো কথা বলব না।বিকেল ৪টা, নিশা লাল-সাদা একটা শাড়ি পরেছে। সাধারণত সে শাড়ি পরে না, আজ কেন পরল বুঝতে পারলাম না। আমি বললাম শাড়ি পরেছ কেন?
নিশা বলো ও পছন্দ করে।আমি বলাম ও পছন্দ করে বলে পরেছ। আর আমি যে প্রতিদিন বলি, সেটা তো শোনো না। নিশা আমাকে বলো তোমার কথা শুনব কেন?আমি বলাম নিশা তাহলে কি ২৯৯টা চিঠি মিথ্যা? নিশা হাসতে হাসতে বলো চিঠি? এগুলো ছিল পাগলামি। আমি বলাম পাগলামি? তুমি এমন কথা বলতে পারো না। কিছুখন দারিয়ে থেকে নিশা আমাকে বলো রাখো তো তোমার প্যাঁচাল, এই নাও। এখানে তোমার দেওয়া আংটিটা আছে, আর একটা চিঠি। এই আমার ৩০০তম চিঠি। আমি বললান আবার চিঠি কেন?নিশা বলো ৩০০ চিঠি পূর্ণ করলাম।আমি তখন বলাম আচ্ছা আমি যাই, আমার ভালো লাগছে না।নিশা তখন বলো যাবা? যাও।বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ করে ইভার দেওয়া বাক্সটা খুললাম। একগাদা গোলাপের পাপড়িতে ভরা বাক্স। চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে বসলাম।চিঠি মধো লেখা ছিলো -এই যে আমার বোকা বাবু, আমি বললাম আমার বিয়ে ঠিক, আর তুমি সেটাই বিশ্বাস করে নিলে। আমার ভালোবাসা কি এতই সস্তা? আমি ভালোবাসি তোমাকে, বুঝেছ বোকা বাবু? আমি একটা পরীক্ষা করলাম। আমার বিয়ের কথা শুনে তুমি যদি আমার চিঠিগুলো পুড়িয়ে ফেলো তবে মনে করব তুমি আমাকে ভালোবাসোনি। ভালোবাসার মানুষের স্মৃতি ধরে রাখাটা ভালোবাসার একটা অংশ। আমি আসছি চিঠিগুলো দেখতে। আম্মা আমাকে ডাকছে।মনির বাবা , কী করিস? কিছু না মা।নিশা আসছে, হাতে গোলাপ অনেকগুলো। আমি বলাম যাও, আমি আসছি। আমি তখন  ঘাম ছি। উঠে দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়লাম, হাত-পা কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে। নিশা চলে এলো আমার ঘরে । আমি বলাম নিশা তুমি?নিশা বলো হ্যাঁ আমি, আমার চিঠিগুলো কই?হাতে থাকা চিঠিটা নিশার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।নিশা বলো আরো বাকি ২৯৯, নিয়ে আসো। আমি অবাক বিস্ময়ে নিশার দিকে তাকিয়ে আছি। তবে কি আমি নিশাকে ভালোবাসিনি? নিশা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। নিশা আমাকে বলো মনির এটা ভালোবাসা নয়, এটা আবেগ। ভালোবাসা হচ্ছে মনের ভেতর পুষে রাখা আকুতি। নীরবে ভালোবাসার মানুষটির সুখ কামনা করা। রাগ করে তুমি যেটা করলে, সেটা ভালোবাসা হতে পারে না। আমি কিছুই বলতে পারছি না, মনের ভেতরটা হাহাকার করে উঠল। আমি বুঝতে পারছি, আমি নিশাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি, যেটা শুধুই ভালোবাসা। এখানে আবেগের স্থান খুব অল্প। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। নিশা চলে যাচ্ছে, এই বুক খালি করে দিয়ে দূরে, অনেক দূরে। সে যে কোথাই চলে গিয়েছিল  তা এখনো সন্দেহ মিলেনি। আমি আজ সেই এক বুক ভালোবাসা নিয়ে বসে আছি তার আপেক্ষাই...!!!

No comments:

Post a Comment